ছোট্ট এক রাজ্য ।সে রাজ্যে রাজা আছেন , মন্ত্রী ,সৈন্য,প্রজা সবই আছেন । সে রাজ্যের রাজার রাণী আছেন,আছেন তার সন্তান।সে রাজ্যে বন্যা,খরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিবছর লেগেই থাকতো। রাজ্যের মানুষগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে কষ্ট করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতো। কোন বছর ফসল না হলেও কর দিতে হতো।রাজার লোক সৈন্য নিয়ে এসে কর আদায় করে ছাড়ত।প্রজাদের উপর কারনে অকারনে নির্যাতন চালাত। রাজা এর কোনটি জানতেন কোনটি জানতেন না। রাজা মাঝে মাঝে রাজ্য ঘুরে দেখেন । তখন প্রজাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। তাদের সুখ দুঃখের খোঁজ খবর নেন।
প্রজারা রাজাকে দেখে এগিয়ে আসে।
প্রজারা বলে, রাজা মোদের ভালো অতি তবু রাজ্যময়
আমরা সুখে নেইকো রাজা দুঃখী সবসময়।
মন্ত্রী এগিয়ে এসে ধমকের সুরে তাদের বলেন,
রাজা অতি সহজ সরল কাছে পেয়ে তাই
মিথ্যে কষ্টের কথা বলার সময় বুঝি নাই।
রাজা বলেন, দাওনা ওদের বলতে কথা
আছে যত দুঃখ ব্যথা।
মন্ত্রী ঃ মিথ্যে সবই মিথ্যে
ছোটলোক আর কৃষক মজুর
বলছে যা সব সকাল দুপুর
মিথ্যে সবই মিথ্যে।
সিপাই এগিয়ে এসে রাজাকে বলেন, তার চেয়ে চলুন রাজা এবার
সময় হয়েছে বিশ্রাম নেবার।
রাজা ফিরে যান রাজপ্রাসাদে। তবু তার মনটা ভারী হয়ে থাকে। প্রজাদের দেখে তাদের সাথে কথা বলে রাজা ভাবেন,প্রজারা কি তবে সুখী নয়!
তিনি মন্ত্রীকে বলেন, শুনলাম কি দেখলাম কি বিজ্ঞ মন্ত্রীমশাই
প্রজারা কেনো বলছে সবে,তারা যে সুখী নাই।
মন্ত্রী আমতা আমতা করে বলে, মাফ করবেন হুজুর
ওরা গরীব মজুর
সন্তুষ্ট হয়না ওরা কভূ
এসব ভেবে অসুস্থ, হবেন কেন প্রভূ।
তবুও রাজার বিচলিত ভাব দূর হয় না।
মন্ত্রীদের শুধান,
মন্ত্রী মশাই তোমরা সবাই ভাবো একবার ভাবো
প্রজাদের মুখে কেমনে আমি হাসি ফোটাতে পাবো?
রাজা দরবারে পায়চারী করতে থাকেন। তারপর থেমে মন্ত্রীদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
কোষাগারে আছে অনেক টাকা
গরীব দুঃখী প্রজার জন্য করতে পারি ফাঁকা।
মন্ত্রী ঃ একি বলছেন রাজা
ওরা ছোটলোক, ওরা আপনার প্রজা।
এসব টাকা দিয়ে
রাজা,মন্ত্রী ঘুরতে পারি
অন্য রাজ্যে যেতে পারি
কিনতে পারি মনিমুক্তো
আরো সোনাদানা।
ওদের কথা ভেবে রাজার
সময় নষ্টের কি দরকার!
বিশ্ব ঘুরে হবে মোদের
বিশ্বকে জানা।।
তবুও রাজার দুঃশ্চিন্তা দুর হয় না। তার রাজ্যে দক্ষ মন্ত্রী আছেন। দক্ষ সৈন্য আছেন। তিনি জ্যোতিষির খোঁজ করেন।
রাজার দক্ষ অনুচররা জ্যোতিষি নিয়ে আসেন।
রাজাকে কূর্ণিশ জানায় জ্যোতিষি।
রাজা ঃ " জ্যোতিষি গো জ্যোতিষি অনেক কষ্টে আমি আছি"
মন্ত্রীরা বলেন হেসে, প্রজারা সুখে আছে।
জ্যোতিষি ঃ ক্ষমা করবেন রাজা মশাই
রাজ্য জুড়ে শান্তি যে নাই।
সহজ সরল মানুষ আনেন
জড়ো করে কথা শোনেন।
মানুষ হতে হবে সরল
রইবে নাতো গন্ডগোল।
রাজা জ্যোতিষির কথামতো মন্ত্রীদের, সৈন্যদের পাঠান সহজ সরল মানুষ খুঁজতে। কিন্তু তারা রাজাকে কোন সহজ সরল মানুষ আনাতো দূরের কথা কোন আশার বানীও শোনাতে পারেনা।
সৈন্য ঃ রাজ্য ঘুরে এইতো এলাম
সরল মানুষ নাইতো পেলাম।
মন্ত্রী ঃ রাজ্য ঘুরে ক্লান্ত হয়ে
ফিরে এলাম না পেয়ে।
রাজা ভাবেন তবে কি তার রাজ্যে সহজ সরল মানুষ নেই।
রাজা সৈন্যকে শুধান, ওরে আমার দক্ষ সৈন্য
কোথায় সরল মানুষ ?
এমন রাজ্য চালাই আমি
সব যে অমানুষ।
মন্ত্রী বলেন, মাফ করবেন রাজা
সবাই আপনার প্রজা
মনে তাদের ক্থটবুদ্ধি
দেবেন তাদের সাজা।
রাজা চিন্তায় পড়ে যান। জ্যোতিষি বলেছে,সহজ সরল মানুষ যোগাড় করতে। অথচ একজনও সহজ সরল মানুষ নেই। কি করে এখন এ রাজ্যের সমস্যার সমাধান হবে। তিনি জ্যোতিষিকে আবার ডেকে আনতে বলেন।
জ্যোতিষি ঃ বলুন মহারাজ,কি অপরাধ আমার
সৈন্য দিয়ে ধরে এনেছেন কেনই বা আমায় আবার?
রাজা ঃ ওরে হতচ্ছাড়া করবো রাজ্য ছাড়া
আমার সাথে করো মসকরা।
সহজ সরল মানুষ, একজনও না মেলে
কেমনে জড়ো করবো বলো, মিলবে দলে দলে।
জ্যোতিষি ঃ আগেই জানতাম এমনই হবে
চাটুকাররা রাজাকে ঘিরে ধরে রবে।
সবার আগে সাফ করতে হবে
সুখ শান্তি মিলবে রাজ্যে তবে।
আশে পাশে আছে তারা
কূটবুদ্ধিতে পক্ক যারা
চলতে রাজা পারবে কি
বলো তাদের ছাড়া ?
রাজা ঃ ওরে হতচ্ছাড়া,
করিসনে তাড়াহুড়া।
কি বলবে খুলে বলো, রাখঢাক রেখোনা
প্রজাদের এই দুঃখ কষ্ট,সইতে আমি পারবোনা।
জ্যোতিষি ঃ বিশ্বাস যদি করতে পারেন, তবেই আমি বলবো
এ ঘরেতে আপনার সাথে, শুধুই আমি থাকবো।
রাজাঃ বেশ তাই হবে
মন্ত্রী,উজির, নাজির
কেহ নাহি রবে।
ঘর হতে সবাই বের হয়ে যায়। এখন এ ঘরে শুধু রাজা আর জ্যোতিষি।
রাজা ঃ এবার ঘরটি ফাঁকা
তুমি আমি একা
দিওনা মনে ব্যথা
বলো সত্যি কথা।
জ্যোতিষি ঃ রাজা আপনি অতি সহজ সরল
যেমনে বুঝায় তেমনি বোঝেন
আপনাতে নেই গরল।
আপনি অতি সরল।
আপনার মন্ত্রি উজির নাজির
এবং সেনাপতি
রাখছে আপনাকে অন্ধ করে
হচ্ছে রাজ্যের ক্ষতি।
তারা অনেক কুটিল মানুষ
ন্যায়ের ধার ধারে না।
প্রজার ভালো মন্দের খোঁজ
তাইতো তারা করেনা।
কি করলে হয় নিজের লাভ
অর্থ সম্পদ আর ক্ষমতা
বুঝতে নাহি পারেন রাজা
এ যে আপনার অক্ষমতা।
রাজা ঃ দাওনা বলে জ্যোতিষি এবার
কি করতে হবে আমার।
জ্যোতিষি ঃ সমস্যাটা ধরিয়ে দিলাম
এবার আমি চলে গেলাম।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে
দেরী হলে সবই যাবে।
রাজা কি করবেন বুঝতে পারেননা। মন্ত্রীরা রাজাকে বুঝান রাজ্য ঠিক আছে অযথাই তিনি চিন্তা করছেন। জ্যোতিষিকে ডেকে আনা ঠিক হয়নি বলে তারা রাজাকে জানান। বলেন, জ্যোতিষি উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে অসুস্থ করছেন রাজাকে।
"জ্যোতিয়ি পায় বুঝি এবার তাই সাজা।
মন্ত্রীদের নিয়ে বসেন আলোচনায় রাজা।"
রাজা ঃ যা বলছো তোমরা, সবই কি তার সত্যি
মন্ত্রী ঃ হ্যা রাজা, রাজ্য আছে সুখে, মিথ্যে নয় একরত্তি।
রাজা ঃ তবে ঘোষনা করো রাজ্যজুড়ে
সুখী নেই কেউ বললে পরে
মিথ্যে বলার শাস্তি হবে
এক কোপেতে গর্দান যাবে।
মন্ত্রী ঃ ধন্য রাজা ধন্য
এ ঘোষনার জন্য।
দেখব এবার সাহস কার
মিথ্যে বলার কি দরকার।
রাজাঃ আনো ধরে আজ সেই জ্যোতিষি
সবার আগে দেবো তার ফাঁসি।
জ্যোতিষি ঃ হাসি হাসি হাসি
আমি আসিয়াছি
দিন মোরে ফাঁসি
তবু আমি হাসি।
কষ্ট হয় তবু বলি
রাজা তোমায় দিচ্ছে গালি।
রাজা ঃ এত্ত বড় কথা
থাকবে কি তার মাথা।
জ্যোতিষি ঃ আজ আপনি রাজা
তাই দিতে পারেন সাজা।
জানবেন ওরা প্রজা
মানুষ অতি সোজা
রাগলে পরে তবে
রাজ্য ছাড়তে হবে।
জ্যোতিষির কথাই ঠিক হয়। প্রজারা বিদ্রোহ করে। রাজা চাটুকার মন্ত্রী ,লোভাতুর সৈন্যদের কথা বিশ্বাস করে নিরীহ প্রজাদের দমাতে যায়। কিন্তু বিপদের সময় তার চারপাশে থাকা তোষামোদ আর চাটুকাররা সরে যেতে থাকে। রাজা একা হয়ে পড়েন। তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
প্রজা ঃ আমরা সহজ সরল প্রজা
চাইনা দিতে রাজাকে সাজা
চাইযে রাজা রাজ্য চালাক
দুষ্টু লোকে ভয়ে পালাক ।
তবু রাজা কেমনে হায়
সরল প্রজাকে পায়যে ভয়
ক্ষমতা দিয়ে দমাতে চায়
রাজত্ব কারও চিরস্থায়ী নয়।
প্রজারা বিদ্রোহ করে দেয়
অহংকারী রাজার পতন হয়।
গ্রামের পথ ধরে রাজা হাঁটতে থাকেন। ক্লান্ত রাজা।
তার পা আর চলতে চায়না।একটা গাছের নীচে বসে পড়েন।ছোট্ট একটা শিশু এগিয়ে আসে।
শিশু ঃ কে তুমি ? কোথায় তোমার বাড়ি?
একা একা ঘুরছো কেন ছেঁড়া কাপড় পড়ি?
রাজা ঃ আমি সহজ সরল মানুষগুলোর রাজা
অন্যায় করেছি তাই, পাচ্ছি এবার সাজা।
শিশু ঃ রাজা বুঝি হেঁটে বেড়ায়,ছেঁড়া কাপড় পড়ে
চড়ে ঘোড়া,দামী কাপড়,মনিমুক্তা ভরে।
মিথ্যে তুমি বলছ এবার যাওগো তুমি সরে।
আমার অনেক কাজ আছে দিওনা দেরী করে।
রাজা ঃ ছোট্ট শিশু তুমি অতি
বলছি শোন কান পাতি।
শিশু ঃ কি বলবে জলদি বলো
আমার সাথে খেলতে চলো।
রাজা ঃ খেলার সময় পরে পাবে
স্কুলেতে পড়তে যাবে।
শিক্ষিত জাতি হলে
দুষ্টুরা যাবে চলে।
অসৎ পথে থাকবে না
অন্যায় করতে দেবেনা।
সরল হয়ে চুপটি করে
থেকোনাকো বদ্ধ ঘরে
রাজ্য হবে আলো ঝলমল
ভালোবেসে করবে সকল।
যাচ্ছি আমি রাজ্য ছেড়ে
দিও আমায় ক্ষমা করে।।
রাজা চলে যান রাজ্য ছেড়ে।কোথায় যান কেউ জানেনা ।কেউ জানতেও চায়না। যে রাজা তার সহজ সরল প্রজাদের বিশ্বাস করতে পারেনা তার খোঁজ কেউ নিতেও চায়না।যারা একদিন তাকে হুজুর হুজুর করে ব্যতিব্যস্ত রাখতো তারা আজ নতুন রাজাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এভাবেই চলতে থাকে রাজ্য। গরীবের আর ভাগ্যের উন্নয়ন হয়না। তারা আরো গরীব হয়।তাদের দুঃখ কষ্ট থেকেই যায়।।
রাজ্যের সহজ সরল প্রজা
বোকা ভাবেন তাদের রাজা।
সিংহাসন পেলে পরে
চাটুকাররা ঘিরে ধরে।
সহজ সরল মানুষগুলো
হোকনা সাদা কিংবা কালো।
সারাজীবন কষ্ট করে
মন্ত্রীরা টাকার পাহাড় গড়ে।
সোনার রাজ্য ধ্বংস হয়
কারবা তাতে কি আসে যায়!
সহজ সরল গরীব দুঃখী
মন্ত্রী সেথা হয়যে সুখী।
যুগের পর যুগ চলে যায়
সরল মানুষ সরল রয়ে যায়।
নতুন রাজা মন্ত্রী আসে
রাজ্য বুঝি সুখে ভাসে।
রাজ্যসভা সে বোঝে না
দুবেলা তার খাবার জোটে না।
আর কতকাল চলবে এমন
নিস্পেষিত হবে জনগন।
ভাবেন রাজা ভাবেন প্রজা
গরীব মানুষ পায়যে সাজা।
অট্টালিকার ইটরা হাসে
ছেঁড়া কাথার স্বপ্ন আসে।
রাজা আসে রাজা যায়
স্বপ্ন তাদের স্বপ্নই রয়।।
অন্যান্য দিনের মত সেদিনও গাছে গাছে পাখিরা গান গাইতে থাকলো। তারা সমস্বরে গেয়ে উঠল,
" রাজত্ব গেলো রাজার,শিক্ষা কেহ নিলো না
শেষ হয়েও গল্প তবু ,শেষতো হলো না।।"
২০ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪